অধ্যাপক কে. এম. শামীম
গোপালপুর প্রতিনিধি:
আজ ২৪ অক্টোবর ২০২৫ শুক্রবার বিকেলে গোপালপুর থানা ব্রীজের পূর্বঢালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি(সিপিবি) গোপালপুর উপজেলা কমিটির উদ্যোগে ভারতবর্ষের কৃষক আন্দোলনের কিবদন্তির কৃষকনেতা হাতেম আলী খানের ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।সিপিবির ভুয়াপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযুদ্ধা কৃষকনেতা আশরাফ আলী তালুকদারের সভাপতিত্বে ও গোপালপুর উপজালার সাধারণ সম্পাদক এম এ মাসুদ মাস্টারের সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিপিবির কেন্দ্রিয় কমিটির সাবেক সদস্য ও কৃষক সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন খান। সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপিবি টাংগাইল জেলা কমিটির অন্যতম নেতা মীর নাসিমুল ইসলাম সেলিম, ঘাটাইল উপজেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান, নাগরপুর উপজেলার নেতা সিরাজুল ইসলাম, গোপালপুর উপজেলা সভাপতি আব্দুর রশিদ কান্দু, সিপিবি নেতা ও সাবেক পৌর কমিশনার হাবিব মন্ডল, বিশিষ্ট চিকিৎসক শাহিনুর রহমান শাহিন, যুবনেতা হানিফ ভুইয়া, কৃষকনেতা আলাবক্স প্রমুখ। সভায় বক্তারা বলেন- দেশের বর্তমান অস্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণ ঘটাতে হলে প্রয়োজন হাতেম আলী খানের রাজনীতি অনুসরন করা। কারণ হাতেম আলী খান দেশের জন্য রাজনীতি করতেন, দেশের খেটেখাওয়া মেহনতি কৃষক-মজদুর শ্রেনীর স্বার্থে রাজনীতি করতেন। তিনি পরাধীনতা থেকে দেশকে মুক্ত করতে দখলদার বৃটিশের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, পাকিস্তানী জালিমের বিরুদ্ধে লড়েছেন, জমিদারী প্রথা ও মহজনি সুদের ব্যবসা উচ্ছেদে সংগ্রাম করেছেন। স্বাধিন বাংলাদেশেও কৃষকের পক্ষে,মজুরের পক্ষে রাজনীতি করেছেন। দেশের কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-জনতা বার বার বুকের রক্ত দিয়ে লড়াই করে ক্ষমতার পালা বদল করেছে কিন্তু নিজেদের ভাগ্যের বদল করতে পারে নাই, তারা বার বার প্রতারিত হয়েছে কারণ ক্ষমতায় কখনও হাতেম আলী খানের আদর্শের রাজনৈতিক দল বসতে পারে নাই। শাসকের বদল হলেও শাসক শ্রেনীর অন্য রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় বসেছে, ফলে নতুন বোতলে পুরানো মদের মতোই লুটেরা ব্যবস্থা বহাল থেকে গেছে। ২৪এর সফল ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানেও ব্যাতিক্রম ঘটে নাই। ভোটাধিকার হরণ, লুটপাট, টাকা পাচার, শোষন-বঞ্চনা থেকে বাচতে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বৈষম্য বিরোধী রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশায় শেখ হাসিনার বিরোদ্ধে আমরা অভ্যুত্থান করলাম, রক্ত দিলাম, হাসিনা ক্ষমতা হারিয়ে দেশ ছাড়লেন অথচ ক্ষমতায় উড়ে এসে জুড়ে বসলো বিদেশী প্রভূর গোলামেরা। এরা ক্ষমতায় বসে অর্থহীন সংস্কারের কথা বলে, ঐক্যমত গঠনের কথা বলে সময় ক্ষেপণ করছে। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বৈষম্যমুক্ত সমাজের স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। সংস্কার দরকার কিভাবে কৃষক ন্যায্য দামে মানসম্পন্ন সার-বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ পাবে ও ফসলের লাভজনক দাম পাবে তার, শ্রমিক কিভাবে ভালোভাবে বেচে থাকতে পারে তার জন্য ন্যুনতম মজুরী নিশ্চিত করা, বেকার যুবকরা যাতে চাকুরী পায় তার জন্য শিল্প-কৃষি ও বানিজ্য নীতিতে এমন সংস্কার করা যাতে আমার দেশের সার কারখানাগুলো পূর্নশক্তিতে উৎপাদন চালু করতে পারে, কৃষিভিত্তিক শিল্প বিশেষত বন্ধ চিনিকল ও পাটকলগুলো চালু করে এবং আরও ব্যাপকভাবে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে লক্ষ লক্ষ যুবকের কর্মসংস্থান হয় সেদিকে কিন্তু এ সরকার তা করছে না। এরা অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে বিদেশী প্রভূদের স্বার্থে তাদের হাতে আমাদের লাভজনক বন্দর তুলে দিতে তালবাহানা করছে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, করিডোর নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। এদিকে কারখানা পুড়ছে, শ্রমিক পুড়ে মরছে, বিমানবন্দর জ্বলছে, জিনিষপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে, সম্মানিত শিক্ষকদের পুলিশ দিয়ে পেটানো হচ্ছে। সরকারের এগুলোর দিকে খেয়াল নেই, উনারা ব্যস্ত আছে ভুয়া সংস্কার ও অর্থহীন ঐক্যমত কমিশন নিয়ে। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা পরিস্কার না, এরমধ্যে এক বড় দল নির্বাচনের কথা বললেও অদৃশ্য কারণে অযোগ্য ব্যর্থ ইন্টিরিম সরকারকে সময় দিচ্ছে, অন্যদিকে ধর্মের লেবাসে রাজনীতি করা সাম্রাজ্যবাদীদের আর্শিবাদপুষ্ট দলগুলো এবং কিংস পার্টি সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়ক শক্তি হিসেবেই এই সরাকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করতে নির্বাচন পেছানোর চক্রান্ত করছে। কার্যত এই দলগুলোর দেশপ্রেম নেই, জযানগণের প্রতি কমিটমেন্ট নেই। দেখুন দেশের কৃষক-শ্রমিক সাধারণ জনগণ দারুণ অর্থকষ্টে আছে, শিল্প-কারখানা বিপর্যস্ত, ব্যাংক-বীমা দেউলিয়া হওয়ার পথে, সবাই ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। এসব নিয়ে সরকার ভাবছে না, সরকার ভাবছে, কিভাবে আমলাদের বেতন-ভাতা দ্বিগুন করে তাদের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় থাকা যায় ! এটা দেশে আরও বৈষম্য বৃদ্ধি করবে, কৃষক-শ্রমিক ও বেসরকারি চাকুরীজীবীদের দুর্দশা বেড়ে যাবে। এসব নিয়ে উল্লেখিত রাজনৈতিক দলগুলোর কথা নেই। আমরা কমিউনিস্ট পার্টি এসবের প্রতিবাদ করেছি, আজও করছি। আমরা দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত নির্বাচন চাই, আমরা জানি এই নির্বাচনে যারাই ক্ষমতায় যাবে তারাও অতিতের মতোই সাধারণ মানুষের স্বার্থে নয়, নিজেদের ব্যাক্তি স্বার্থে, দলের স্বার্থে এবং বিদেশী প্রভূদের স্বার্থেই দেশ চালাবে ফলে জনদুর্ভোগ বাড়বেই। তাই নিজেদের দল গঠনের বিকল্প নেই, কমিউনিস্ট বামপন্থীদের শক্তি বৃদ্ধির বিকল্প নেই। বক্তরা হাতেম আলী খানের স্মরণ সভায় আগত সকলকে এবং অন্যন্য দেশপ্রেমিক জনগণকে গ্রামে গ্রামে কৃষক-শ্রমিকের পক্ষে শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলার আহবান জানান।
Leave a Reply