মা তুমি এই বনে একটি রাত থাকো, কাল এসে তোমাকে আবার নিয়ে যাব’ এ মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ৫০ বছর বয়সী এক নারীকে শাল-গজারির বনে ফেলে যায় ছেলে ও মেয়েরা। পরে রাত দেড়টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমাউল হুসনা লিজার নেতৃত্বে ওই নারীকে ওই বন থেকে উদ্ধার করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে। ওই হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ওই নারীকে ভর্তি না করলে আজ মঙ্গলবার সকাল সাতটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কালাম আজাদ জানান, সোমবার রাত আটটায় বনের ভেতর থেকে ওই নারীর কান্নার শব্দ শোনে স্থানীয়রা আমাকে খবর দেয়। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ এলাকার গন্যমান্যদের নিয়ে ওই নারীর কাছে যাওয়া হয়। দূর থেকে অনেক জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই নারী এক পর্যায়ে তাঁর ছেলে-মেয়েরা কীভাবে তাঁকে জঙ্গলে ফেলে গেছে সে কাহিনি বর্ণনা করেন। পরে রাত ১২টার দিকে ইউএনওকে খবর দেওয়া হয়। ইউএনও পুলিশ ও মেডিকেল দল নিয়ে রাত দেড়টার দিকে ওই ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাতপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই নারীকে ভর্তি না করলে আজ মঙ্গলবার(১৪.০৪.২০২০) সকাল সাতটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের আইসোলেশন বিভাগে রাখা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শাহীনুর আলম আজ সকালে বলেন, ওই নারীর শরীরে জ্বর, গলাব্যাথা, ঠান্ডা, কাশি ও শ্বাসকষ্ট রয়েছে। করোনার উপসর্গ থাকায় ওই নারীকে রাতেই কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের চিকিৎসাদের সঙ্গে কথা বলে পাঠানো হয়। পরে ভোর পাঁচটায় ওই হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ না হওয়ায় সকাল সাতটার দিকে ঢাকা মেডিকেলের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ ওই নারীর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে। কাল বুধবার ফলাফল জানা যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমাউল হুসনা লিজা বলেন, করোনার লক্ষণ থাকায় ওই মহিলার এক ছেলে ও দুই মেয়ে ও মেয়ের জামাই তাঁরা মিলে তাঁদের মাকে ওই বনে ফেলে দিয়ে তাঁরা গ্রামে চলে যায়। তাঁরা তাঁর গর্ভধারিনী মাকে একা একটি গভীর জঙ্গলে ফেল গেল ? কী অমানবিক আচরণ করল তাঁর সন্তানেরা। জীবিত অবস্থায় তাঁরা তাঁর মাকে ফেলে গেল। গ্রামবাসী খোঁজ না পেলে রাতের বেলা হয়তো ওই অসুস্থ নারীকে শেয়াল কুকুরে খেয়ে ফেলত। ইউএনও ওই নারীর ছেলে মেয়ের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে এসব উক্তি তাঁর ফেসবুকে প্রকাশ করেন।
তিনি আরও বলেন, ওই নারীকে উদ্ধারে সখিপুর থানার ওসি ও একদল পুলিশ, হাসপাতালের আরএমও ডা. শাহীনুর আলমসহ চিকিৎসা দল, গজারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মিঞাসহ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বাররা আমাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন।
ইছাদিঘী গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, ওই নারীর বাড়ি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায়। নাম মাজেদা বেগম। গাজীপুরের সালনায় একটি পোশাক কারখানায় ওই নারীর এক ছেলে (ছানোয়ার) ও দুই মেয়ে (শাবানা ও শাহানা) ও মেয়ের জামাই চাকরি করেন। সবাই মিলে সালনায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। ওই নারী সবাইকে রান্না করে খাওয়াত। কয়েকদিন ধরে ওই নারীর জ্বর, ঠান্ডা কাশি শুরু হলে আশপাশের বাসার লোকজন তাঁদের তাড়িয়ে দেয়। এক পর্যায়ে তাঁরা একটি পিকআপ ভাড়া করে শেরপুরের নালিতাবাড়ী যাওয়ার পথে টাঙ্গাইলের সখিপুরের ইছাদিঘী ওই জঙ্গলে তাঁদের মাকে ফেলে চলে যায়।
তবে ওই চিকিৎসক আরও বলেন, ইউএনও মহোদয়ের মানবিকতার গুণে ওই নারীর চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে। এর আগেও তিনি সখিপুরে অসহায় চার নারীকে পৃথকভাবে তাঁদের খাবার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিলেন।
Leave a Reply