পদ্মা নদীর নামেই সেতুর নামকরণ চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। পদ্মা নদীর উপর নির্মিত এই সেতুর নাম ‘পদ্মা সেতু’ চূড়ান্ত করে রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি ‘পদ্মা সেতু’ নামকরণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। রোববার সেতু বিভাগের উন্নয়ন অধিশাখার এক প্রজ্ঞাপনে পদ্মা সেতু নামটি চূড়ান্ত করা হয়।
এতে বলা হয়েছে, ‘সেতু বিভাগের অধীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প’-এর আওতায় মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া এবং শরীয়তপুর জেলার জাজিরা প্রান্ত সংযোগকারী পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি সরকার ‘পদ্মা সেতু’ নামে নামকরণ করলেন।’
রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সেতু বিভাগের উপসচিব মো. আবুল হাসানের সই করা গেজেটে আরও বলা হয়েছে, ‘জনস্বার্থে জারিকৃত এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
এর আগে গত ২৪ মে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদ্মা নদীর নামেই সেতুর নামকরণ করা হবে। আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন বলেও জানান তিনি।
এর মধ্যেই সেতুতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। জোরোশোরে এগিয়ে চলছে সেতুকে যান চলাচলের সম্পূর্ণ উপযোগী করার কাজ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজনে সেতু বিভাগ বেশ কিছু উপকমিটি গঠন করেছে। বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে সেতুটির উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভায় ভাষণ দেবেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য, আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য, কূটনীতিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর আগে থেকেই এ প্রকল্প দেশে-বিদেশে আলোচিত হয়। এজন্য অনুষ্ঠান যতটা সম্ভব আকর্ষণীয় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা সরাসরি ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হবে। বর্তমানে যানবাহনকে ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিতে হয়।
পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের উড়ালপথ ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
এরই মধ্যে পদ্মা সেতু পারাপারের জন্য টোলের হার নির্ধারণ করেছে সরকার। গত ১৭ মে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পরিবহনের জন্য আলাদা আলাদা টোলের হার নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। সরকার নির্ধারিত টোল হার অনুযায়ী, পদ্মা সেতু পারাপারে মোটরসাইকেল ১০০ টাকা, কার ও জিপ ৭৫০, পিকআপ এক হাজার ২০০ ও মাইক্রোবাসকে এক হাজার ৩০০ টাকা টোল পরিশোধ করতে হবে। বাসের ক্ষেত্রে ছোট বাস (৩১ আসন) এক হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাস (৩২ আসন বা এর বেশি) দুই হাজার, বড় বাসকে (থ্রি-এক্সেল) প্রতি দুই হাজার ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে।
এছাড়া ছোট ট্রাককে (পাঁচ টন পর্যন্ত) এক হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে (পাঁচ টনের বেশি ও সর্বোচ্চ আট টন পর্যন্ত) দুই হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (আট টনের বেশি ও সর্বোচ্চ ১১ টন) দুই হাজার ৮০০ টাকা, ট্রাকে (থ্রি-এক্সেল পর্যন্ত) পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা, ট্রেইলার (ফোর-এক্সেল পর্যন্ত) ছয় হাজার টাকা। আর ট্রেইলার (ফোর-এক্সেলের অধিক) ছয় হাজারের সঙ্গে প্রতি এক্সেলের জন্য এক হাজার ৫০০ টাকা যুক্ত হবে।
Leave a Reply